অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভিকে নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খান। সংবিধান অনুযায়ী দেশটিতে ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও এখনও তারিখ ঘোষণা না করায় আলভির কাজ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।
ইমরান খানের বোন আলেমা খান এই তথ্য সামনে এনেছেন বলে বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা না করায় প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভির ওপর ইমরান খান হতাশ ও ক্ষুব্ধ বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বোন আলেমা খান।
বুধবার লাহোরে সন্ত্রাসবিরোধী আদালতের (এটিসি) বাইরে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে আলেমা দাবি করেন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা না হওয়ায় ইমরান দুঃখিত হয়েছেন। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট আলভির উচিত ছিল জনগণের অধিকারের পক্ষে দাঁড়ানো।
এক প্রশ্নের জবাবে ইমরানের বোন অভিযোগ করেন, (দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী) ডোনাল্ড লু-এর নাম নেওয়ার জন্য তাকে অপরাধী হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ইমরানের দল পিটিআই মনে করে, তাদের সরকার উৎখাতের পেছনে তিনি ছিলেন। আলেমা জানান, তিনি নিজেও গ্রেপ্তার হতে প্রস্তুত।
দুর্নীতির মামলায় গত ৯ মে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে নাটকীয়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয় ইমরান খানকে। তার সেই গ্রেপ্তার পারমাণবিক অস্ত্রধারী এই দেশে মারাত্মক অস্থিরতা সৃষ্টি করে। আধাসামরিক বাহিনী রেঞ্জার্স ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের ফলে পাকিস্তানে যে অস্থিরতা শুরু হয় তা টানা চারদিন অব্যাহত ছিল এবং এতে কমপক্ষে ১০ বিক্ষোভকারীর মৃত্যু ও বহু সামরিক ও রাষ্ট্রীয় স্থাপনা ধ্বংস হয়ে যায়।
এছাড়া পাকিস্তানের ইতিহাসে এবারই প্রথমবারের মতো বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে রাওয়ালপিন্ডিতে দেশটির সেনা সদর দপ্তরে (জিএইচকিউ) প্রবেশ করে এবং লাহোরে কর্পস কমান্ডারের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। পরে সামরিক বাহিনী ৯ মেকে ‘কালো দিবস’ হিসেবে অভিহিত করে এবং সেনা আইনের অধীনে বিক্ষোভকারীদের বিচার করার সিদ্ধান্ত নেয়।
পরে শীর্ষ আদালতের হস্তক্ষেপে ইমরান কারাগার থেকে মুক্তি পলেও তার দল পিটিআইয়ের ওপর নেমে আসে ব্যাপক দমন-পীড়ন। সহিংসতা এবং সামরিক স্থাপনায় হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে শত শত পিটিআই কর্মী এবং সিনিয়র নেতাদের কারাগারে বন্দি করা হয়।
দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল বলছে, গত ৯ মের সহিংসতার মামলায় পিটিআই নেতা আসাদ উমর এবং পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খানের দুই বোনকে গ্রেপ্তার করতে চেয়েছিল লাহোর পুলিশ। তবে আসাদ উমর, আলেমা এবং উজমা খানের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
অবশ্য আলভি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার ক্ষেত্রে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে ইমরান খানের দাবির বিরোধিতা করেছেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট। দ্য নিউজের এক প্রশ্নের জবাবে প্রেসিডেন্টের বাসভবন আইওয়ান-ই-সদর প্রেসিডেন্ট আলভির দৃষ্টিভঙ্গি জানিয়েছেন।
এতে বলা হয়েছে, জাতীয় পরিষদের বিলুপ্তির ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন বাধ্যতামূলক জানিয়ে ৬ নভেম্বরের (৮৯তম দিনে) আগে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বলেছিলেন আরিফ আলভি।
আইওয়ান-ই-সদরের মুখপাত্র মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সমস্ত রাজনৈতিক দলকে সুযোগ দেওয়ার জন্য সময়মত নির্বাচন করতে চান। প্রেসিডেন্ট গত ৬ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে লেখা তার চিঠিতে ইতোমধ্যেই জানিয়েছেন, সংবিধানের ৪৮(৫) অনুচ্ছেদ তাকে জাতীয় পরিষদ বিলুপ্তির ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের জন্য তারিখ নির্ধারণ করার ক্ষমতা দিয়েছে। ওই চিঠিতে প্রেসিডেন্ট আরও জানিয়েছিলেন, জাতীয় পরিষদের সাধারণ নির্বাচন আগামী ৬ নভেম্বরের মধ্যে হতে হবে।’
মুখপাত্র বলেন, প্রেসিডেন্ট আলভি চান গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে এবং আরও শক্তিশালী হবে। এছাড়া নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে কোনও রাজনৈতিক দলকে বাদ দেওয়া গণতন্ত্রের চেতনার সঙ্গে অন্যায় হবে।
পাকিস্তান যে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে তা কাটিয়ে উঠতে প্রেসিডেন্ট আলভি রাজনৈতিক সংলাপ এবং জাতীয় ঐক্য গঠনের ধারণাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেন বলেও জানান ওই মুখপাত্র।
বেশ কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল বলছে, তার দলের (পিটিআই) কোনও সহকর্মী তাকে সমর্থন না করায় এবং সমালোচনার মুখে তার পক্ষে আওয়াজ না তোলায় হতাশ হয়েছেন প্রেসিডেন্ট আলভি।
উল্লেখ্য, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে আরিফ আলভি ছিলেন পিটিআই-এর সিনিয়র নেতাদের একজন এবং ক্ষমতায় আসার আগে ইমরানের সংগ্রামবহুল বছরগুলোতে ছায়ার মতো বিশ্বকাপজয়ী সাবেক এই তারকা ক্রিকেটারের পাশে ছিলেন তিনি।
অবশ্য বিশ্বের অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পদটি অনেকটা সাংবিধানিক এবং ক্ষমতা কাঠামোয় আলঙ্কারিক। আর তাই ইমরানের ক্ষোভ বা হতাশা সত্ত্বেও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রেসিডেন্ট আলভির কোনও আইনি বা সাংবিধানিক ক্ষমতা নেই।
মূলত পদাধিকারবলে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হতে পারেন কিন্তু বাস্তবে তার কোনও নির্বাহী ক্ষমতা নেই এবং তিনি কেবল প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে কাজ করতে পারেন। আর এ কারণেই হয়তো সংবিধান অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন আয়োজনে তিনি কেবল নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছেন, নিজে থেকে ভোটের কোনও তারিখ ঘোষণা করেননি।
Leave a Reply